#তোমাকে__প্রয়োজন💔
#Written__by__Hiya_Chowdhury❣
#Part__03
#Welcome_back_to_Canada
প্রীতির সামনে একটা ফুলের তোড়া ধরে কেউ এই কথাটি বলে উঠে। ফুলের তোড়া টার জন্য ওই ব্যক্তির মুখ টা দেখা যাচ্ছে না। ফুলের তোড়া টা প্রীতি হাতে নিতেই প্রীতি সামনে তাকিয়ে দেখে ওর ফুপাতো ভাই শান্ত দাঁড়িয়ে আছে।
প্রীতিঃ ওহ্ শান্ত ভাইয়া তুমি। আমি তো ভাবছি আরো কেনা কে? ভাইয়া তোমাকে এত্তো গুলো থ্যাংকস এই ফুল গুলোর জন্য☺
(শান্ত দেখতে বেশ Handsome...উচ্চতা ৬.২,,, White Shirt,,, Black জিন্স,,, Black Cort,,, Black ঘড়ি,,, এক কানে Black টপ,,, Brown লোফার,,, চুল সিলকি সামনে Brown কালার করা। যে কোনো মেয়ে ক্রাশ খেতে বাধ্য,,,😍)
শান্তঃ থ্যাংকস দিতে হবে না পাগলী। কেমন আছো বলো?😍
প্রীতিঃ এই তো ভালো তুমি?
শান্তঃ আমি তো এখন আরো বেশি ভালো আছি তুমি এসেছো বলে কথা।(বিড়বিড় করে)
প্রীতিঃ কিছু বললে?
শান্তঃ না বলছিলাম যে আমি ও অনেক ভালো আছি। এখানেই দাড়িয়ে তো সব কথা হবেই না আগে তো বাসায় নিয়ে যাই তোমাকে😇
প্রীতিঃ হু😊
শান্তঃ চলো।
প্রীতিঃ হুম ভাইয়া চলো।
শান্ত গাড়ি নিয়ে আসে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে আর প্রীতি কে নিজের পাশের সিটে বসায়। প্রীতির বরাবরের মতোই মন খারাপ উপরে যতই হাসুক ভিতর থেকে বুক ফেটে কান্না আসছে তার। এক দৃষ্টিতে গাড়ির ছোট কাচের দরজা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। শান্ত বার বার আড়চোখে প্রীতিকে দেখছে। সে যেনো প্রীতি কে বার বার চোখেই হারায়। প্রীতি যেনো শান্ত কে এক অদ্ভুদ মায়ায় জড়িয়ে নেয় প্রতিবারই।
শান্ত বেশ বুঝতে পারছেন প্রীতির মন খারাপ। না হলো এতো চঞ্চল মেয়ে কখনো চুপ থাকার কথা না। প্রীতির প্রতি শান্তর দুর্বলাতা আসে ওর এই চঞ্চলতা থেকেই। আর তাছাড়া প্রীতির মায়াময় চেহারা যেনো ওকে কোনো ঘোরে নিয়ে চায়।
শান্ত ভাবে হয়তো আব্বু আম্মু কে ছেড়ে আসায় প্রীতির মন খারাপ। তাই শান্ত আর প্রীতি কে কিছু বললো না। হঠাৎ করেই প্রীতির কানাডায় আসার কথা শুনে যতোটা না খুশি প্রীতির ফুপিরা হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি খুশি হয়েছে শান্ত। শান্তর স্টাডি কমপ্লিড করা ছাড়া দেশে যাওয়ার হচ্ছিলো না। খুব মিস করছিলো প্রীতি কে। কিন্তুু এভাবে হুট করে প্রীতির আগমনে শান্ত খুব বেশি Excited ছিলো । সারাটা রাত চিন্তা করেছে কখন সকাল হবে। আর কখন সে প্রীতির সেই মায়াময় চেহারা টা দেখবে।
এসব ভাবতেই মুচকি মুচকি হাসে শান্ত। কেন যে প্রীতির এই মায়াতে বার বার সে হারিয়ে যায় এটা সে নিজে ও জানে না। শান্তর কাছে প্রীতি হচ্ছে মায়াবতী। 😍
এদিকে বিমান উঠার ফলে প্রীতির ফোনের নেটওয়ার্ক একদম ই ছিলো না। রুহী আর রিদিতা বার বার ট্রাই করছে প্রীতিকে ফোন করার বাট কল যাচ্ছে ই না। ফোন দিতে দিতে ওরা হাপিয়ে উঠেছে। প্রথম প্রথম ভাবে হয়তো প্রীতি ঘুমাচ্ছে বা অন্য কিছু.! কিন্তুু কলেজ থেকে ফেরার সময় সোজা প্রীতির বাসায় চলে যায়।
কারণ ওদের চিন্তা প্রীতির কোনো খারাপ কিছু হলো না তো..? বাসায় এসে জানতে পারে প্রীতি আর বাংলাদেশেই নেই। দুই জন ই এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কান্না করে দেয়। কারণ প্রীতি কে খুব ভালোবাসা ওরা নিজের বোনের থেকে ও বেশি। প্রীতির সাথে ওদের সম্পর্ক টা যেনো রক্তে মিশে গিয়েছিলো।প্রীতির আম্মু ওদের এমন অবস্থা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।
রহী আর রিদিতা বাসায় চলে যায়। ওদের গলা দিয়ে খাবার ও যেনো নামছে না। এতো দিনের প্রিয় প্রতিনিয়ত ওদের সাথে থাকা সাথী কে ছেড়ে ১/২ দিন নয় ২ টা বছর কাটাতে হবে ওদের। খুব অভিমান কমে প্রীতির প্রতি রুহি আর রিদিতার। তবুও ওরা অপেক্ষা করছে প্রীতির কল ব্যাক করার..!
পিয়াস বেশ খুশি মনেই আছে। ঘুরছে খাচ্ছে। ওর সব ঠিক মতো ই চলছে কিন্তুু ওর দেওয়া অপমানের ফল হিসেবে যে এতো গুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এটা তার মনেই নেই। পিয়াস জানে না এই কষ্ট টা একটা সময় ওর ও ভোগ করতে হবে..!!
শান্তঃ প্রীতি এই প্রীতি...!
প্রীতিঃ হু ককককি হয়েছে?
শান্তঃ আরে আমরা বাসায় পৌঁছে গেছি। এই দেখো।
প্রীতি চোখ কচলিয়ে ভালো ভাবে চারপাশে তাকিয়ে ও নিজেকে রুমে আবিষ্কার করে।
তার মানে ওও সত্যিই বাসায় পৌঁছে গেছে।প্রীতির চোখ খুলে যাওয়ার মতো অবস্থা। ও তো গাড়িতে ছিলো তাহলে বিছানায় কিভাবে এলো? শান্ত প্রীতির ফুপুনি আর ফুপাতো বোন সাইমা প্রীতির কে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। 😊
প্রীতিঃ আআআআমি এখানে কিভাবে এলাম আমি তো.......
সাইমাঃ গাড়িতে ছিলে তাই তো?
প্রীতিঃ হু।
ফুপুনিঃ প্রীতি তুমি যখন গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলে তখন শান্ত বাসায় পৌঁছে তোমাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে আসে।
প্রীতিঃ আআআআআম্মু ইয়ে মানে ফুপুনি আসলে আমি?🙈🙈(ইয়া লম্বু ভাইয়া টা আমাকে কোলে করে এখানে নিয়ে এসেছে? আম্মু ছিঃ ছিঃ ফুপুনি রা কি মনে করেছে হায়রে। আমাকে ডেকে দিলো কি হতো?😥) মনে মনে
সবাইঃ 😅😅
ফুপুনিঃ আরে এতো লজ্জা পেতে হবে না। প্রীতি যাও এবার ফ্রেশ হয়ে আসো।
প্রীতিঃ আচ্ছা ফুপুনি।
তারপর শান্ত চলে যাওয়ার সময় একবার পিছন ফিরে প্রীতির দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে দেয়। প্রীতি নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে পড়ে আব্বু আম্মুর+ রহী রিদিতার কথা। ফোন খুঁজতেই দেখে ওর বালিশের পাশে ওর ফোন রাখা। ফোন হাতে নিয়ে প্রীতির দম বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ১২০ টা কল😱😱 যার মধ্যে সব ই কিনা রহী আর রিদিতার। খুব কষ্ট লাগে ওদের জন্য।
প্রীতি তাড়াতাড়ি ওর আম্মু কে ফোন দেয়। ২ জনের সাথেই কথা বলে নেয়। অনেক্ষন কথা বলার পর রুহী কে সহ্ ইমুতে গ্রুপে কল দেয়। ইমুতে ওদের তিন জনের একটা গ্রুপ অপেন করা আছে তাতে। কল যাওয়ার পরে রুহী আর রিদিতা ২ জন ই চমকে উঠে রাত প্রায় ৯ টায় প্রীতির কল।
প্রীতির প্রতি অভিমানের বসে ২ জন ই কল কেটে অফ লাইন হয়েছে যায়। প্রীতি ইমুতে
ফোন দিয়ে দেখে ওরা অফ লাইন হয়েছে গেছে। প্রীতি বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ওদের ওর প্রতি খুব অভিমান জমেছে।
প্রীতি এমনি তে কল দিলো নাহ ধরছে না। প্রীতির বরাবরের মতো ট্রাই করছে বাট ওরা কেউ ফোন তুলছে না। তাই প্রীতি একটি মেসেজ লিখে____"👇
"আমি জানতাম তোরা আমাকে খুব ভালোবাসিস। আমি এ ও জানতাম তোদের যদি আমি মিথ্যে না বলতাম তাহলে তোরা আমাকে কানাডা তে আসতে দিতিনা। তোদের ছেড়ে এখানে আসার কোনো ইচ্ছে ছিলো না আমার। বিশ্বাস কর ভেবেছিলাম পিয়াস স্যার ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তুু না। উনি আমাকে ভালোবাসেন না। তাও আমি ওখানেই থাকতাম যদি স্যার আমাকে এত্তো গুলো কথা না শুনাতো। আমি ওই খানে আর যাই হোক কখনো ভালো থাকতে পারতাম নারে। পিয়াস স্যার কে দেখলে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যেতাম। অনেক টা ভালোবেসে ফেলেছিলাম যে তাকে। তাই এই ডিসিশন টা নিয়ে নিলাম। জানি তোরা অনেক কষ্ট পেয়েছিস সরি রে। তোদের স্মৃতি নিয়েই নাহয় ২ টা বছর ঠিক পার করে দেবো। ওই ২ বছরে দেখবি একদম চেঞ্জ হয়ে ফিরবো। প্লিজ তোরা আমাকে মাফ করে দিস। আমি জানি তোদের না বলে কানাডায় চলে আসা টা আমার ঠিক হয় নি। কিন্তুু এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় যে ছিলো না।😢 প্লিজ তোরা আর অভিমান করে থাকিস না। বড্ড ভুল হয়ে গেছে সরি রে গুলুমুলো রা।☺"
এর পর আর কার সাদ্ধ আছে প্রীতির উপর অভিমান করে থাকার। ৩ জনেই কান্না করছে। প্রায় অনেক্ষন কান্না করার পর শান্ত হয় প্রীতি। তারপর ফোন কেটে দেয়।
দেওয়ালের দিকে মুখ করে কান্না করছে প্রীতি। শান্ত প্রীতির এ অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলো না। প্রীতির কান্না করায় প্রীতির থেকে ও যেনো শান্তর ই বেশী কষ্ট হচ্ছে। স্থির থাকতে পারলো না শান্ত।
ধীর পায়ে এগিয়ে আসে প্রীতির দিকে। প্রীতির থেকে ওর দুরুত্ব বেশি দুরে নয়। প্রীতির কাধেঁ হাত রাখবে কিনা ভাবছে শান্ত। যদি প্রীতি মাইন্ড করে। শান্ত কে খারাপ ভাবে..! শান্ত কে ঘৃণা করে তখন কি হবে..! এসব ভাবতেই প্রীতির দিকে হাত বাড়াতেই শান্তর হাত খুব কাঁপছে।
কিন্তুু প্রীতির কান্না ও যে থামছে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই শান্ত নিজের দিকে মুখ করে আস্তে আর বেশ কোমল ভাবেই প্রীতির কাঁধে হাত রাখে।
প্রীতি চমকে উঠে। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে দেখে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে। প্রীতি নিজেকে সামলাতে না পেরে শান্ত কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়।😭
প্রীতি শান্ত কে জড়িয়ে ধরলে ও শান্ত তাকে ধরে নি। কারণ শান্ত জানে প্রীতির এখন সেন্স ঠিক নেই। আর তাছাড়া শান্ত প্রীতির উপর অধিকার অর্জন করে তবেই প্রীতি কে নিজ থেকে স্পর্শ করবে/জড়িয়ে ধরবে। এর আগে সে নিজের ভালোবাসা কে কোনো ভাবেই অপবিএ করতে পারবে না। কিছুতেই না। ওই সময় শুধু প্রীতি ঘুমিয়ে গিয়েছিলো দেখে বাধ্য হয়েই কোলে করে নিয়ে এসেছিলো।
প্রীতি কাঁদতে কাঁদতে শান্তর শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে পুরো। তবুও শান্ত প্রীতি কে স্পর্শ করছে না। শান্ত প্রীতিকে কিছু বলছে না কারণ শান্ত শুনেছে মেয়ে রা কান্না করে তবেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারে। বেশ কিছুক্ষন পর প্রীতি একটু স্বাভাবিক হয়। সেন্স ফিরে সে এখন কোথায়?
প্রীতি জলদি সরে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে..!
প্রীতিঃ I am sorry...I am really very sorry vaia😢 আসলে আমি....
শান্ত হা হয়ে আছে প্রীতির মুখের দিকে তাকিয়ে। কাঁদার ফলে কাজল লেপ্টে গেছে প্রীতির চোখের। যার ফলে অদ্ভুদ এক সুন্দর লাগছে প্রীতি কে।
শান্তঃ আরে পাগলি এতো কাঁদতে হয়। আমার পুরো শার্ট ভিজিয়ে দিলা😂😂 আচ্ছা এবার যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
প্রীতিঃ 😥আচ্ছা।(ধুর আমি ও না কি যে করি। ছিহ্ ভাইয়া কি মনে করলো কে জানে😢)মনে মনে
শান্তঃ কি হলো যাও।
প্রীতিঃ হু যাচ্ছি।
প্রীতি ফ্রেশ হয়ে চলে যায়। হাত মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসে প্রীতি। তারপর উরনা টা প্যাচিয়ে নেয় কোনো ভাবে। শান্ত চলে গিয়েছিলো কারণ প্রীতি ফ্রেশ হয়ে এসে তাকে দেখলে লজ্জা বোধ করবে। প্রীতি কে লজ্জায় ফেলতে চায় নি শান্ত।
প্রীতি আয়নায় নিজেকে দেখছে কেমন একটা জেনো হয়ে গেছে সে। চুল গুলো পিঠের উপর ছেড়ে দিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ায় প্রীতি।
ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে সবাইঃ ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। সাথে প্রীতির ফুপা ও আছে। প্রীতি ২ জনের সাথেই ভালো মন্দ কথা বলে নেয়।
শান্ত প্রীতির দিকে এক কাপ কফি এগিয়ে দেয়। প্রীতির কেনো যেনো খুব লজ্জা লাগছে। তাও প্রীতি শান্তর হাত থেকে কফিটা নেয়। তবে শান্তর দিকে না তাকিয়েই। যেটা শান্ত লক্ষ্য করে আর মুচকি হাসে।☺😍
#To_be_continue