অজানা_সুখ । কলমেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)। পর্বঃ ১

অজানা সুখ

কলমেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)

পর্বঃ ১

অজানা সুখ


শৈশব পেরিয়ে যখন কৈশরে পা দিলাম তখন পরিবার সম্পর্কেও একটু একটু করে বুঝতে শিখলাম। 

কৈশরে খেয়াল করতাম মা যখন বাবার জন্য খাবার নিয়ে যেতো তখন দাদী ২/৩ পিচের মত বেশি মাছ বাটিতে তুলে দিতো কারন বাবা মাছ খেতে খুব পছন্দ করতো। বাবা সবসময় রুমে বসে একা খেতেই পছন্দ করতো। বেশ কয়েকবার দেখেছি বাবা মাকে বলতো তুমিও আমার সাথে বসো খেতে! 

মা বলতো, 

- না, তুমিই খাও। আমি তোমার সাথে খেতে বসলে মানুষ খারাপ বলবে। 

বাবাও আর কথা বাড়াতো না। শুধু খাওয়া শেষে আস্তে করে বলতো, 

- এক পিচ মাছ আমি খেয়েছি আর পিচ রাখা থাকলো এটা তুমি খেয়ে নিও। 

মাছ মাংস যেটাই হোকনা কেনো বাবা সবসময় এই কথাটাই বলতো আর বাবার কথাটা শুনে মাকে দেখতাম মুখে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতো। 

শৈশবে অতটা বুঝতামনা মা কেনো শুধু মাথা নারিয়ে সম্মতি জানাতো। মাথা নাড়িয়ে বাড়তি খাবার গুলো হাতে নিয়ে যখন রুম থেকে বেরিয়ে আসতো মা। তখনের ঘটনা গুলো শুধু দেখতাম কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতামনা যে মায়ের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানানোর কারন ছিলো পরের ঘটনা গুলো। যখন কৈশোরে পা দিলাম তখন থেকে একটু একটু বুঝতে শিখলাম। যে মা কেনো মুখে কোনো কথা বলতোনা। 

বাবার খাওয়া শেষে মা যখন বাড়তি খাবার গুলো নিয়ে সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামতো তড়িঘড়ি করে দাদী এসে মায়ের হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে নিতো। মা হয়তো চোখ লজ্জার ভয়ে কখনো বলতে পারেনি ওই মাছটা আপনার ছেলে আমার জন্য রেখেছে। শুধু আড়ালে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি।

সবার খাওয়া শেষ হলে তবেই বাড়ির বউরা খেতে পারবে এটাই আমার দাদীর নির্দেশ ছিলো। সবার খাওয়া শেষ হলেই মা এবং মেজো কাকি খেতে বসতো। সবার খাওয়া শেষে যেটুকু অবশিষ্ট থাকতো তা দিয়েই দুই জা খেয়ে উঠতো। 

একরাতে সবার খাওয়া শেষ হলে মা এবং কাকি খেতে বসেছিল, কাকি দেখলো এক পিচেরও অর্ধেক মাছ আছে। তা দেখে কাকি বললো, 

- বুবু মাছটুকু তুমি নাও আমি তরকারি আর ঝোল দিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। 

- না তুমি ছোটো তুমি খাও রাতে বেশি খাওয়া লাগেনা আমি সামান্য একটু খাবো। 

- আরে বুবু তুমি হলে এ বাড়ির বড়ো তোমাকে রেখে আমি কি করে খাই বলো!

কে খাবে আর এটুকু মাছ কেই বা কতটুকু কাকে ভাগ দিবে এই নিয়ে দুই জায়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে আর কারোই খাওয়া হয়নি। ওভাবেই পড়ে ছিলো মাছের টুকরোটা। এর সবকিছু বাবা দুর থেকে দেখে দাদীকে আর দাদাকে ডেকে বলেছিলো ওরা দুজন এবাড়ির বউ ওদের আমরা এনেছি তাই ওরা বাড়িতে এসেছে কেওই বানের পানিতে ভেসে আসেনি তাই আমি চাই তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু এ বাড়িতে দেওয়া হোক। এই বলে বাবা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। দাদা এগুলো শুনে দাদীকে সেদিন খুব বকেছিলো। দাদী তর্ক করছিলো তাই দাদা কয়েকবার তেড়ে তেড়ে মারতেও গিয়েছিলো দাদীকে। দুরে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সবটাই। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি যে ওখানে কি হচ্ছিলো। 

মেজো চাচার এসব নিয়ে ততটা মাথা ব্যাথা ছিলোনা তাই সবটার দ্বায়ভার আমার মায়ের উপরেই এসে পড়লো। দাদী ভেবেছিলো মা সবকথা বাবার কানে লাগিয়েছে। তাই দাদী সেদিন কঠিন ভাষায় বলে দিয়েছিলো সংসারের কোনো কথা যদি কারো স্বামির কানে যায় তাহলে তার সেই দিনই শেষ দিন হবে এ সংসারে। তাই সেদিন থেকে মা বাবার সামনে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতো। 

এক রাতে মা আমাকে পড়াতে বসিয়েছিলো। বাবা বাইরে থেকে এসে পিছন থেকে মায়ের মাথায় একটা গাঁদা ফুল গুজে দিয়ে বলেছিলো, 

- সুন্দর লাগছে তোমাকে। 

মা বাবার দিকে তাকিয়ে শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলো,

- তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো খেতে দেই। 

আর আমার হাতে চারটা চকলেট দিয়ে বলেছিলো, 

- মন দিয়ে লেখাপড়া করো তাহলে কাল আবার নিয়ে আসবো। 

পরদিন সকালে দেখলাম দাদী মাকে বলছে,

- রাত দুপুরে মাথায় ফুল গুঁজে রঙ তামাশা শুরু করেছো! তোমাদের কাছ থেকে ছোটোরা কি শিখবে? এসব যেনো আর না দেখি।

মা শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সু্চক সম্মতি জানিয়েছিলো।

পরদিন বাবা যখন আবার ফুল আনলো মা বললো,

- গাঁদা ফুলের গন্ধটা আমার কেমন যেনো লাগে আর এনোনা কখনো। 

বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মা সেদিন তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়েছিলো ওখান থেকে। 

এগুলো দেখতাম আর ভাবতাম শশুর বাড়ি কি এমনই হয়! সবার শাশুড়ীরাই কি এমন হয়! 

একটু একটু করে কৈশোর পেরুতে শুরু করলাম। যখন কৈশর পেরুলাম তখন একটু একটু করে নিজের মধ্যে ভয় গুলোও বাড়তে থাকে। 

দিন পেরিয়ে বছর পেরিয়ে আমিও আজ কোনো বাড়ির বউ হয়ে যাচ্ছি। তাহলে কি আমার দসাও মায়ের মতো হবে!  বাসর ঘরে বসে বসে এই কথাগুলোই ভাবছিলাম। কারো আসার শব্দে চেতনা ফিরলো। 

চলবে...


অজানা সুখ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatch

Random Products