অপূর্ণতায়_পূর্ণতা পর্বঃ-০২

 #অপূর্ণতায়_পূর্ণতা

পর্ব_২

অপূর্ণতায়_পূর্ণতা


ও আমাকে ওর বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো,কে আপনি?

আমি চরম এক ঝাটকা খেলাম।

মেঘ,তুমি আমায় চিনতে পারছোনা?আমি তোমার মেঘা।

-কোন মেঘা?আমি কোন মেঘা টেঘাকে চিনিনা।

-মেঘ আমি জানি তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো।কিন্তু দেখো,প্লিজ এত নির্দয় হইওনা।

দেখো আমি ঘর ছেড়ে হলুদের স্টেজ থেকে পালিয়ে তোমার কাছে একেবারে চলে এসেছি।


এবার ওর বাসার সবাই এক ঝাটকা খেলো।

মেঘ কোন কথা বলছেনা।

ওর ভাবী,আমাকে বলছে,তুমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে নাকি আমি তোমায় হাত ধরে বের করে দিবো?ওর কয়দিন পরেই বিয়ে।আর ও বলেছেনা ও তোমায় চেনে না?তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন?বের হও ঘর থেকে।


আমি মেঘের কর্লার ধরে বলছি,ও কলিজা,তুই আমাকে চিনিস না,না?একবার তাকা আমার দিকে।তুই না বলতি,আমার চোখের দিকে তাকালে তোর ঠোঁটে হাসি ফোটে।আজ তোর সেই প্রিয় চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে।তুই দেখবিনা?আমি কাঁদলে না তোর বুকের ভেতর ব্যথা করে?আজ করছেনা ব্যথা?

আমি কই যাবো বলতে পারিস তুই?

আমার তো মৃত্যু ছাড়া কোন পথ খোলা থাকবেনা।আরাধ্য অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।


ওর ভাবী আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে রুমের বাইরে বের করে দিলো।

আমি ঠাস করে গিয়ে ওর বাবার পায়ের কাছে পড়লাম।

সবাই বাসায় ছিলো,ওর বাবা ছাড়া।ওর বাবা কাহিনী কি জানতে চাইলেন।

ওর ভাবী গড় গড় করে সব বলে যাচ্ছে।

মেঘের মা মেঘের বাবাকে ডেকে তাদের রুমে নিলেন।আমি অসহায়ের মত বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।

আর ভাবছি,হায়রে ভালবাসা।

আজ আমায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলি তুই?


মেঘের বাবা রুম থেকে বেরিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,আমি জানিনা কে এই মেয়ে।কি তার পরিচয়।কিন্তু মেয়েটা যেভাবে বাড়ী ছেড়ে পালিয়েছে,আর যেভাবে কাঁদছে।মনে হয়না এর মাঝে কোন অভিনয় আছে।ও সত্যিই মেঘ কে ভালবাসে।আর একটা মেয়েকে এই অবস্থাতে আমি আমার বাসা থেকে বের করে দিতে পারিনা।আর আমি যত টুকু বুঝতে পারলাম ও মেঘকে ভালো রাখবে।তাই একটা কাজীর ব্যবস্থা করো।

আর একজন মার্কেটে গিয়ে বর কনের জন্য ড্রেস কিনে নিয়ে আসো।আমি আজই মেঘের সাথে মেয়েটার বিয়ে সেরে ফেলতে চাই।তাছাড়া এসব লোকজন জানাজানি হলে নানান ঝামেলা হবে।


মেঘ ওর মায়ের দিকে একবার,আর বাবার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেল্লো।

ওর ভাবী ফুসফুস করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

মেঘের মা আমাকে বাথরুম দেখিয়ে দিলো,গোসল করে নিতে বল্লো।

আমি গোসল করছি আর ভাবছি,হায়রে মেঘ,সবাই আমায় আপন করে নিচ্ছে।কিন্তু যার আপন আমি হতে চাইলাম তারই মন থেকে আপন হতে পারলাম না।

মাথায় পড়ছে পানি,আর পানির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে আমার চোখের জল।


কয়েক জন মিলে আমাকে বিয়ের সাজে সাজাচ্ছে।সবার বিয়ের শাড়ী হয় খয়েরী,লাল বা গোলাপি রঙের।কিন্তু আমার বিয়ের শাড়ী দেখছি খয়েরি আর নীল মিক্সড।খয়েরীর মাঝে পাড়ের কাছে নীল নীল কারুকাজ।

মনে পড়লো,মেঘের তো নীল রঙ পছন্দ।আমি যেদিন প্রথম ভিডিওকলে ওর সামনে আসি,সেদিন নীল রঙ গায়ে ছিলো আমার।আর ও বলেছিলো,

নীল রঙে আমায় নাকি অপ্সরী লাগে।

অথচ আজ ও আমায় চিনেই না।


মা রুমে ঢুকে একটা জুয়েলারি বক্স দিলো আপুর হাতে,যে আমাকে সাজাচ্ছিলো।

মা বল্লো,মেঘ নিয়ে এসেছে।আপু খুলে যখন আমাকে পরাচ্ছিলো আমি অবাক হচ্ছিলাম,এতো আমার পছন্দের জুয়েলারি।তবে কি ও ওর হবু বউ এর জন্য আমার পছন্দের জুয়েলারি নিয়ে এসেছিলো?ওই মেয়েকে পরাবে বলে নিয়ে এসেছিলো?মা আমাকে একটা নাক ফুল এনে হাতে দিলো আর বল্লো,টানা নথ টা খুলে নাক ফুল টা সকালে পরে নিও।আজ টানা নথ পড়ে থাকো।মেঘের পছন্দ।


মেঘও রেডি হয়ে গেছে।

আমাকে মায়ের রুমে সাজানো হচ্ছে।কাজী সাহেব এসে গেছেন।বাবা মেঘকে ডাকলেন,আমি খাটে বসে আছি ঘোমটা দিয়ে।কাজী বিয়ে পড়াচ্ছেন।সবার মুখে হাসি,শুধু মেঘ আর মেঘের এক ভাবী ছাড়া।

তিন কবুল পড়ে,সাইন দিয়ে হয়ে গেলো সবার দোয়ায় আমাদের বিয়ে।

রাত প্রায় ১টা।

মেঘের ছোট ভাই আমার কাছে এসে প্রথম ডাক দিলো,ভাবী।

জীবনের প্রথম ডাকটা শুনে চোখে জল এসে গেলো।আমি মেঘের বউ।ওর স্ত্রী আমি।ওর নামে আজ থেকে আমি পরিচিত।ভাবতেই খুশিতে চোখে জল।


মেঘ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।দেবরের সাথে অনেক ক্ষণ কথা হলো।

কিছু ক্ষণ পর ছোট আপু,আর মেঘের অন্য ভাবী এসে আমাকে মেঘের রুমে নিয়ে গেলো।আমি ঢুকতেই চোখ কপালে।

এতো দেখছি আমার পছন্দেই পুরো ঘর ফুলে সাজানো।যেমনটা আমি স্বপ্ন দেখেছি।আর মেঘ আমার সব পছন্দের কথা জানে।আমার বাসর ঘরটা আমার পছন্দতেই সাজানো থাকবে,তাও আবার এত সুন্দর করে তা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।


আমাকে খাটে নিয়ে বসিয়ে দিলো।ভাবী বলে গেলো,বিছানার ফুল গুলো যেমন আছে সকালেও যেন ঠিক তেমন থাকে।নষ্ট যেন না হয়।

আমি মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা সম্মতি জানালাম।


রাত আড়াইটা,

মেঘের খবর নেই।আমি ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছি খাটের এক কোনায়।যাতে ফুল গুলো নষ্ট না হয়।সকালে ভাবী এসে জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবো?

আমি বুঝতে পারিনি,ভাবী যে দুষ্টুমি করে বলে গেছেন।

কিছু ক্ষণ পর দরজায় নক করে মেঘ রুমে প্রবেশ করলো...

এই প্রথম ওর উপস্থিতিতে আমি আতকে উঠলাম।

অজানা এক ভয় আমার বুকের ভেতর।ও আমাকে মন থেকে এক্সেপ্ট করেছেতো?বিয়েটা ওর ইচ্ছেতে হয়েছে তো?ও আমায় স্ত্রী রুপে মেনে নিবে তো?নাকি আমি হারাবো আমার অধিকার?

আমার চিন্তা গুলোর অবসান ঘটিয়ে

মেঘ এসে খাটে বসলো.

আমার হাতের লোম সব দাঁড়িয়ে গেলো।ভয়+লজ্জায়।

আমি ভেবেছি ও এখন আমার ঘোমটা তুলবে।দেখবে ওর বউটাকে কেমন লাগছে।

কিন্তু আমাকে অবাক করার মাত্রা ছাড়িয়ে দিয়ে সে আমার পাশে রাখা একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়,

আর ওখানেই সে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লো।


চলবে,,,,

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatch

Random Products