লেখাঃ আয়েশা
সত্য ঘটনা
ঘটনাটি আমার এক ছোটো ভাইয়ের কাছ থেকে শুনা।
ঘটনাটি ঘটে ঝিনাইদহ টার্মিনালের কাছে একটা বাড়িতে। বাড়ির মালিকের নাম সামাদ সাহেব (ছদ্মনাম)।
সামাদ সাহেবের ১ছেলে আর ১ মেয়ে। সামাদ সাহেব একজন সরকারি চাকুরিজীবি। সেনাবাহিনীতে মেজর হিসাবে জয়েন করেছিলেন।
তিনি ঐ এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। সামাদ সাহেবের গ্রামের বাড়ি মাগুরা। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার সুবিধার্থে তিনি ঝিনাইদহে জমি কিনে সেখানেই একটা বাড়ি নির্মান করে সেখানে বসবাস করা শুরু করেন।
বাড়িটি আনুমানিক ১৯৭০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। বাড়িটা তিন তলা।
১ম ও ৩য় তলা ছাত্রাবাস হিসেবে চলে আর ২য় তলায় সামাদ সাহেব তার পরিবার নিয়ে থাকেন।
ছাত্রাবাসটি ইবি এর তত্ত্বাবধানে চলতো।
সামাদ সাহেব তার স্ত্রী সন্তান দের নিয়ে সুখেই দিন পার করছিলেন।
উনার ছেলে মেয়ে দুজনেই ইবি তে লেখা পড়া করে। ঐ ছাত্রাবাসে বেশি ভাগ ছাত্ররাই ইবি এর। সামাদ সাহেবের ছেলে নয়ন ইবি তে পড়ে সেই সুবাদে তার কিছু বন্ধু তাদেরই ছাত্রাবাসে ১ম তলায় থাকতো।
সামাদ সাহেবের মেয়েটা দেখতে মাশাল্লাহ। অনেক সুন্দরি।
নয়নেরই এক বন্ধু নয়নের বোনকে পছন্দ করে। আর সেই ছেলেটা বিভিন্ন ভাবে তার বোন কে উত্ত্যক্ত করতে থাকে।
মেয়েটা তার উত্যক্ত সহ্য করতে না পেরে নয়নকে বিষয়টা জানায়। নয়ন তার বন্ধুকে বলে তার বোনকে যেনো উত্যক্ত না করে।
এতে নয়নের বোনকে উত্যক্ত করা কমেনা বরং আরও বেড়ে যায়। নয়ন রেগে গিয়ে ওর বন্ধুকে বলে যে ওদের বাসা যেনো সে ছেড়ে দেয়।
এতে ওর বন্ধু আরও রেগে যায় আর নয়নকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে। এই নিয়ে দুই বন্ধুর মাঝে বিশাল এক ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে যায়।
দুজনের বন্ধুত্ব শত্রুতে রুপ নিলো।
নয়নের বন্ধু সহ আরো কয়েকজন মিলে প্ল্যান করে যে নয়নকে তারা মেরে ফেলবে।
যেমন কথা তেমন কাজ।
একদিন রাতে নয়নের এক বন্ধু এসে নয়নকে ডেকে নিয়ে যায়।
সেই যাওয়াই ছিলো নয়নের শেষ যাওয়া।
ডেকে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন মিলে নয়নকে কুপিয়ে হত্যা করে ঐ বাড়িরই ছাদের উপর। কয়জন ছিলো তা জানা যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন ছিলো। কারন দুই একজনের পক্ষে এতো বড়ো কাজটা করা সম্ভব ছিলো না।
নয়নকে খুন করে তার দেহোটাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল।
একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যু তার মা মেনে নিতে পারেনি। ছেলের টুকরো করা লাশ দেখে সেইদিনই তার মা হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়।
থাকলো নয়নের বাবা আর বোন।
বাড়ির সব জায়গায় স্ত্রী আর ছেলের স্মৃতি জড়িয়ে ছিলো। তাই সামাদ সাহেব আর সেখানে থাকতে না পেরে সবকিছু নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরা চলে যায়।
আর বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু এই গল্পটা এখানে শেষ না।
নয়নের খুনিরা নয়নের তিন টুকরা লাশের এক টুকরো যেটা ছিলো কোমর থেকে পা পর্যন্ত সেটা রেখেছিলো বাড়ির ছাদে।
মাঝখানের টুকরো যেটা ছিলো গলা থেকে কোমর পর্যন্ত সেটা রেখেছিলো ২য় তলায় একটা ঘরে।
আর মাথাটা রেখেছিলো ১ম তলায় একটা ঘরে।
যখন সামাদ সাহেব বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন তারপরই শুরু হয়ে যায় ঐ বাড়িতে ভৌতিক সব কাহিনি।
আশপাশের লোকজন মাঝে মাঝে দেখতো ছাদে কেউ একজন সাদা কাপড় পরে হেঁটে বেড়ায়।
আবার বাড়ির ভিতর থেকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ আসে। কখনো জানালা বাড়ানো আবার কখনো দরজা বাড়ানোর দুমদাম শব্দ আসে। মাঝে মাঝে জোরে জোরে কান্নার শব্দও আসে। এই ঘটনা গুলো ঘটতো রাত ১২ টা থেকে ফজরের আজান পর্যন্ত।
এভাবেই কেটে যায় আারও কয়েক বছর।
তারপর এক লোক বাড়িটা ভাড়া নেয় নিয়ে আবারো ছাত্রাবাস হিসাবে চালু।
তবে ঐ ছাত্রবাসে রাত ১০ টার পর ছাদে যাওয়া নিষেধ ছিল। ১০টার আগেই ছাদের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়া হতো।
আর রাত ১২ টার পর কেও ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হতে পারবেনা। এটাই ছিলো কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। কিন্তুু কেনো নিষেধ ছিল সেটা বলতোনা।
এভাবেই প্রতিনিয়ত ভৌতিক আর অবাস্তব ঘটনা ঘটতে থাকে। কখনো পুরোবাড়ি কেপে উঠে ভুমিকম্পের মতো। কখনো হঠাৎ হঠাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায় আবার একাই খুলে যায়। মাঝে মাঝে দেখা যেতো সবাই বসে আছে এমন সময় দরজা জানালা সমানে নড়ে উঠতো। আর এটা মাঝে মাঝেই হতো।
আবার বারান্দায় মানুষ চলাফেরা করারও শব্দ শুনা যেতো মাঝ রাতে।
কেও যদি ভুল করেও রাত ১২টার পর দরজা খুলে বাইরে বের হয় তাহলে সাদা কাপড় পরা একজন তার দিকে তেড়ে আসে
ছাত্ররা অনেক সময় ভয় পেয়ে ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যায় আবার কেও মিথ্যা বলে এড়িয়ে যায়।
আমারই এক ভাই ২০১৬ সালে যায় ঐ ছাত্রাবাসে থাকার জন্য। তো তাকে সবাই বুঝিয়ে দিয়েছিলো সেখানকার নিয়ম গুলো।
রাত ১২ টার পর যেনো ঘর থেকে বের না হয় আর ১০টার পরে ছাদে যেনো না যায়।
ভাইয়ের আবার রাত জাগার অভ্যাস ছিলো।
একদিন রাত ১ টা বাজে তখন ভাই এর মনে হলো যে এখানে তো রাত ১২ টার পর দরজা খুলা নিষেধ। আমি আজ দরজা খুলে দেখব যে কি হয়।
ও দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে বারান্দায় দাড়িয়েছে এমন সময় দেখে সাদা কাপড় পরা একজন তার দিকে তেড়ে আসছে।
তার চোখ দুটো রক্ত মাখা। নখ গুলো বড়ো বড়ো। চেহারা বিভৎস ভাই দেখে ভয় পেয়ে ওখানেই পড়ে যায়।
ওর যখন জ্ঞান ফিরে তখন তার মনে পড়ে যে কাল রাতে ওর সাথে কি হয়েছিল।
তখন ভাই ঐ ছাত্রাবাস ছেড়ে দিয়ে অন্য ছাত্রবাসে উঠে। ২/৩ বছর আগে কবিরাজ এনে বাড়িটাতে অনেক কিছু করে বন্ধ করে নেয়া হয়। আপাতত ভৌতিক আর অবাস্তব ঘটনা কমে গেছে। তবে এখনো মাঝে মাঝে সাদা কাপড় পরা একজনকে আজও ছাদে হাঁটতে দেখা যায়।
সমাপ্ত