#অজানা_সুখ
পর্বঃ ২
কমলেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)
আঁড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম আমার হাজবেন্ড সুমন রুমে ঢুকছে। বিছানার কাছে আসতেই আমি নেমে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাবো এমন সময় সুমন আমাকে ধরে নিয়ে তারপর সোজা করে দাঁড় করিয়ে বললো,
-মেয়েরা হচ্ছে মায়ের জাতি তাদের স্থান পায়ে নয়, তাদের জায়গা সম্মানের শীর্ষ স্থানে। আর পায়ে হাত দিয়ে কখনো কাওকে সালাম করতে নেই।
এর মধ্যে দরজায় কে যেনো টোকা দিয়ে বললো,
- সুমন! বাবা আসবো?
- হ্যাঁ মা এসো।
বুঝতে পারলাম শাশুড়ী মা এসেছে। গাড়ি থেকে নামার পর কেও একজন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো যে এটা তোমার শাশুড়ী কিন্তু অনেক মানুষ এর ভিড়ে চেহারাটা ঠিকঠাক দেখা হয়নি।
খেয়াল করলাম মায়ের হাতে কিছু একটা ঢাকা দেয়া। দেখে মনে হলো খাবার জাতীয় কিছু হবে হয়তো। উনি টেবিলের উপর ওগুলো রাখার পর আমি মায়ের পায়ে সালাম করতে গেলে উনি কিছুটা সরে গিয়ে বললো,
- কারো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই মা। এতে পাপ হয়। আসো আমার কাছে আসো।
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অথচ আমার মা একবার নানী বাড়ি যাওয়ার সময় দাদীকে সালাম করতে ভুলে গিয়েছিল দেখে দাদী সহ ফুফুরা মাকে কতই না কথা শুনিয়েছিলো। সেবার মা পুরোটা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে নানী বাড়ি গিয়েছিলো। মায়ের কান্না দেখে আমিও কয়েকবার চোখের পানি মুছেছিলাম। কিন্তু এবাড়ির পরিবেশটা একেবারেই আলাদা লাগছে আমার কাছে।
- ঋতু! এতো কি ভাবছো মা?
হচকচিয়ে উঠে শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
- না মা তেমন কিছু না। হঠাৎ মায়ের জন্য মনটা কেমন করে উঠলো।
- মা বাবাকে ছেড়ে এসেছো তাতো একটু খারাপ লাগবেই। রাতটা থাকো একটু মানিয়ে, কাল না হয় সুমন গিয়ে তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। সুমন আয় বাবা আমার কাছে এসে বস।
সুমন এসে মায়ের পাশে বসলো। মা বললো,
- বাবা, আমি যেদিন বউ হয়ে এই বাড়িতে এসেছিলাম সেদিন আমারও ঠিক এমনটাই লেগেছিলো। সেদিন আমার চোখের পানি দেখে তোর দাদী বলেছিলো,
- এই পৃথিবীতে তুমি একাই অন্যের বাড়ির বউ হয়ে আসোনি সবাই এভাবেই আসে এতো কান্না কাটি করার কিছু হয়নি। এখন থেকে এটাই বাড়ি ঘর এখানেই থাকতে হবে। বাবা মায়ের জন্য মায়া ত্যাগ করো।
কথাগুলো শুনে সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আর বার বার ভাবছিলাম তাহলে কি আমার পিছনে যা ফেলে আসলাম সবই আমার সৃতি হয়ে থাকবে! এটা ভেবে আরও কান্না পাচ্ছিলো যে আমার শৈশব কৈশোর সব হারিয়ে গেলো?
আগের দিনে, বিয়ের পর তিন দিন বা সাত দিন পর বাবার বাড়ি যেতে দিতো। এই সাত দিনের মাঝে একবার তোর বাবাকে বলেছিলাম,
- আমাকে একবার ওবাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিয়ে আসবে? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মাকে। সেদিন তোর বাবাও তোর দাদীর মতো ওই একই কথা বলেছিলো।
- সুমন, আমি চাই আমার বাড়ির বউয়ের যেনো কখনো এমন কথা না শুনতে হয়। আমি বুঝি আপনাজন ফেলে আসার কষ্ট কতোখানি। সে সময় একেকটা দিন মনে হতো একেকটা বছর। যে কষ্ট আমি পেয়েছি আমার বাড়ির বউ যেনো সেই কষ্ট পায়।
- মা তুমি চিন্তা করোনা। আমার মা যে কষ্ট পেয়েছে আমি কখনোই আমার সন্তানের মাকে সে কষ্ট পেতে দেবোনা।
আমার দুচোখ বেঁয়ে শুধু অনর্গল পানি পড়েই যাচ্ছে। একই আল্লাহ পাকের সৃষ্ট মানুষের মন মানসিকতার মধ্যে আকাশ পাতালের তফাৎ এটা দেখে।
- সুমন, খাবার ঢাকা দেয়া থাকলো তুই আর বউমা খেয়ে নিস একসাথে।
এই কথা বলে শাশুড়ী মা হাতে থাকা একটা বক্স থেকে একজোড়া কানের দুল বের করে দিয়ে মা বললো,
- মা তোমার কানে যেগুলো আছে ওগুলো তো ভারি তাই সকালে উঠে এগুলো পরে নিও।
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। শাশুড়ী মা বের হয়ে যাওয়ার পর সুমন বললো,
- ঋতু, তোমার কি ফুল পছন্দ?
- গোলাপ।
সুমন বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে কিছু বেলি ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
- আমিতো জানতামনা তোমার গোলাপ পছন্দ। কিন্তু বেলি ফুল আমার খুব পছন্দ তাই আজকে বেলি ফুলই এনেছিলাম। আজকের মত এগুলোই গ্রহন করো। কাল থেকে না হয় গোলাপ আনবো!
- সংসার যখন দুজনের তাহলে সেই সংসারে দুজনের পছন্দের জিনিসই আসা উচিৎ। তাই গোলাপ যদি আসে তাহলে বেলি কেনো আসবেনা! যদি আসে তাহলে দুরকম ফুলই আসবে।
সুমন একটা হাসি দিয়ে বললো,
- জো হুকুম মহারানী।
কথাগুলো বলেই সুমন ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
শশুর বাড়ির সবাইকে এভাবে দেখে আমি সত্যিই অনেকটা অবাক হলাম। আমি অচেনা অজানা একটা মানুষ অথচ অল্প কিছু সময়ে তারা কতোটা আপন করে নিয়েছে আমাকে। অথচ মা চাচিদের দেখেছি বছরের পর বছর তাদের সংসারে কলুর বলদের মতো শ্রম ভালোবাসা দিয়েও কখনো শশুর শাশুড়ী ননদের মন জোগাতে পারেনি।
আমি আর সুমন ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে গেলাম। ফজরের আজান দিতে উঠে নামাজ পড়ে বাইরে যেতেই ননদ বলে উঠলো-
চলবে..